সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

হামাসের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে আনোয়ার ইব্রাহিম

হামাসের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে আনোয়ার ইব্রাহিম

ডেস্কঃ ফিলিস্তিনিদের প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের বলিষ্ঠ সমর্থন তাঁর দেশের জন্য নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। এর কারণ, হামাস ও ফিলিস্তিনিদের অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীকে বাইরে থেকে যারা অর্থায়ন করছে, তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার একটি আইন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

আনোয়ার ইব্রাহিমের প্রশাসনের ওপর চাপ ছিল মালয়েশিয়া যেন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দেয় অথবা হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের এই চাপেও হামাস বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদলাননি ইব্রাহিম। মালয়েশিয়ার পুলিশ এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে যে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দিক থেকে অর্থনৈতিক অন্তর্ঘাত, গুপ্তচরবৃত্তি এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার ওপর হুমকি আসতে পারে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক কালে তেল আবিবের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে রয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মালয়েশিয়া মনে করে, হামাস গাজার বৈধভাবে নির্বাচিত সরকার। ২০০৬ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে।

হামাসের সদস্যরা মালয়েশিয়ার কাজ করতে আসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাঁরা সেখানে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার লক্ষ্যবস্তু হন বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু আনোয়ার ইব্রাহিমের এই অকুতোভয় অবস্থানের পেছনে দেশজ রাজনীতির প্রেক্ষাপটই মূল ভূমিকা পালন করেছে। মালয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী মালেদের (ধর্মীয়ভাবে মুসলিম) সমর্থন যাতে তাঁর ওপর বজায় থাকে, সেটা চান আনোয়ার। তাঁর সরকারের টিকে থাকা এবং সামনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসার ক্ষেত্রে মালেদের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার এই সময়ে শুধু বাকচাতুরী করে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। কেননা, প্রায় এক বছর বয়সী তাঁর সরকারকে বিরোধী ইসলামপন্থী জোট পেরিকাতান ন্যাশনাল (পিএন) শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। আনোয়ার ইব্রাহিমের বহুজাতিক জোট সরকার এবং রক্ষণশীল বিরোধী জোট—দুই পক্ষই গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলার প্রতিবাদে বিশাল মিছিল করছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সোলারিস স্ট্র্যাটেজিস সিঙ্গাপুরের জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক বিষয়াদি বিশ্লেষক মোস্তফা আইজুদ্দিন বলেন, ‘ফিলিস্তিন ইস্যুতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সমর্থন দেওয়ার পেছনে তাঁর দেশের ভেতরেই জোরালো প্রেরণা রয়েছে। আনোয়ার নিজেকে তাঁর দেশের জনগণের কাছে একজন শক্তিশালী ও প্রধান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে হাজির হতে চান, যিনি আমেরিকার রাজনৈতিক চাপেও নতি স্বীকার করেন না।’ গত মাসে পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার সময় আনোয়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তিনটি কূটনৈতিক নোটে মালয়েশিয়া যাতে হামাসের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করে, সে বিষয়ে “সতর্ক” করেছে। আমি তাদের বলেছি, আমাদের নীতি অনুযায়ী, হামাসের সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক রয়েছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।’ সমালোচকেরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ‘হুমকি’ পাচ্ছেন—এই দাবি অতিরঞ্জিত। ২৪ অক্টোবর কুয়ালালামপুরে এক সমাবেশে আনোয়ার বলেন, ‘ইউরোপ, আমেরিকা ও অবশ্যই ইসরায়েল থেকে সমালোচনার শিকার হচ্ছি এবং কেউ কেউ আমাকে আক্রমণও করতে পারে। আমাদের হুমকি দেওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না…আমরা ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের সঙ্গে আছি।’ ফিলিস্তিনি সাংস্কৃতিক সংস্থা মালয়েশিয়া (পিসিওএম)— এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি কার্যত মালয়েশিয়ায় হামাসের দূতাবাস– এমন অভিযোগও রয়েছে। যদিও মালয়েশিয়ার সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এই সংস্থার সঙ্গে হামাসের নেতাদের যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হামাসের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরাসরি সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও কিছু দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মনে করে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com